বৈয়ম পাখি অর্থ কি
বৈয়ম পাখি অর্থ কি : বৈয়ম পাখি বাংলা ভাষার একটি শব্দ যা দিয়ে প্রায়শই ময়না বা মায়না পাখিকে বোঝানো হয়। বৈয়ম বা ময়না পাখি একধরনের গায়ক পাখি, যার বৈজ্ঞানিক নাম **Gracula religiosa**। এদেরকে সাধারণত ‘হিল মাইনা’ নামে ডাকা হয়। এই পাখিটি এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, বিশেষত বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, এবং শ্রীলঙ্কায় প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।
ময়না পাখি তার সুদক্ষ স্বরনকলার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এরা মানুষসহ অন্যান্য জীবের শব্দ নিখুঁতভাবে অনুকরণ করতে পারে। এদের বাচনশক্তি অন্যান্য পাখিদের থেকে অনেক বেশি উন্নত। ময়না পাখি সাধারণত ২০-২৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়ে থাকে এবং এদের গা চকচকে কালো রঙের হয়ে থাকে। এদের চোখের চারপাশে ও ঠোঁটের নিচে উজ্জ্বল হলুদ রঙের আচ্ছাদন থাকে, যা তাদের বিশেষভাবে চিহ্নিত করে।
ময়না পাখি সাধারণত জোড়ায় বসবাস করে এবং বনে, বাঁশবনে বা ঝোপঝাড়ে বাসা বাঁধে। এরা সবথেকে বেশি সক্রিয় থাকে দিনের বেলা এবং রাতের বেলা এরা নির্দিষ্ট গাছে ঘুমায়। ময়না পাখি খুবই সামাজিক প্রকৃতির, তারা সাধারণত ঝাঁক বেঁধে চলাফেরা করে এবং তাদের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে।
খাদ্যাভ্যাসের দিক থেকে, ময়না পাখি প্রধানত ফল, বীজ, পোকামাকড় এবং ছোট ছোট প্রাণী খায়। তারা বাগান ও বনে প্রচুর ফল খেয়ে থাকে, বিশেষত বটগাছের ফল এদের প্রিয়। ময়না পাখি মানুষের কাছ থেকেও সহজে খাবার গ্রহণ করতে পারে এবং অনেক সময় মানুষের সান্নিধ্যেও থাকতে পছন্দ করে।
বংশবিস্তার:
ময়না পাখির প্রজনন ঋতু সাধারণত বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালে হয়। এ সময়ে পুরুষ পাখিরা মহিলাদের মনোরঞ্জনের জন্য বিশেষ ধরনের গান গায়। এদের বাসা সাধারণত গাছের ফাঁকা কোটরে বা মানুষের তৈরি বাসা বক্সে হয়। একটি ময়না পাখি প্রতি প্রজনন ঋতুতে ২-৪টি ডিম পাড়ে এবং মেয়ে পাখিটি প্রধানত ডিম ফোটায়। ডিম থেকে ছানা ফুটতে প্রায় ১৪-১৫ দিন সময় লাগে এবং ছানাগুলি ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে বড় হয়ে উড়তে সক্ষম হয়।
ময়না পাখির মেধা:
ময়না পাখির মেধা অন্যান্য পাখিদের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। তারা মানুষের ভাষা ও বিভিন্ন ধরনের শব্দ অনুকরণ করতে সক্ষম। তারা প্রায় ২০-৩০টি ভিন্ন শব্দ শিখতে পারে এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এই শব্দগুলি প্রয়োগ করতে পারে। ময়না পাখির এই মেধা তাদেরকে কেবলমাত্র একটি আকর্ষণীয় গৃহপালিত পাখি নয়, বরং বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয়বস্তু হিসেবেও মূল্যবান করে তোলে।
বাংলা সাহিত্যে এবং সংস্কৃতিতে ময়না পাখির বিশেষ স্থান রয়েছে। বহু লোককাহিনী, গান, এবং ছড়ায় এই পাখিটির উল্লেখ পাওয়া যায়। ময়না পাখির কথা বলা ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বহু মজার কাহিনী রচিত হয়েছে। এমনকি লোকজ বিশ্বাসে, ময়না পাখির কথা বলা ক্ষমতাকে অনেক সময় মিরাকল বা অলৌকিক ক্ষমতা হিসেবে ধরা হয়েছে।
সংরক্ষণ:
বর্তমানে ময়না পাখির সংখ্যা কমে আসছে। এদের আবাসস্থল ধ্বংস এবং অবৈধ শিকার প্রধানত দায়ী। বিশেষ করে এদের বনের গাছ কাটার ফলে তাদের বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এদের সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যেমন বনের সংরক্ষণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, এবং অবৈধ শিকার বন্ধ করা।
ময়না পাখির জন্য সঠিক সংরক্ষণ ও আবাসস্থল সংরক্ষণ তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে, এদের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা এবং বনের সংরক্ষণে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।
ময়না পাখি একটি অত্যন্ত মেধাবী ও বুদ্ধিমান পাখি, যা শুধুমাত্র মানুষের বিনোদন প্রদান করে না, বরং প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেও ভূমিকা পালন করে। তাদের সংরক্ষণ ও সঠিক যত্ন নেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব, যাতে তারা নিরাপদে ও সুখে থাকতে পারে এবং তাদের অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলি আমাদের পৃথিবীকে আরও সুন্দর ও বৈচিত্র্যময় করে তুলতে পারে।
আরও পড়ুন >>> আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ