প্রতিহিংসা অর্থ
প্রতিহিংসা অর্থ : প্রতিহিংসা বলতে বোঝায় কোনো ব্যক্তির প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা বা প্রতিকারমূলক শাস্তি দেওয়ার ইচ্ছা। প্রতিহিংসা সাধারণত তখন উদ্ভূত হয়, যখন কেউ মনে করে যে তার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, বা কেউ তাকে অপমান বা ক্ষতি করেছে। এটি এক ধরনের অনুভূতি যা মানসিকভাবে একজন ব্যক্তিকে তাড়িত করে তার প্রতিদান হিসেবে ক্ষতির মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে। এই প্রতিক্রিয়া অনেক সময় তাৎক্ষণিক হতে পারে, আবার দীর্ঘদিন ধরে পুষেও রাখা হয়, যা একসময় বড় আকারের শত্রুতায় রূপ নেয়।
প্রতিহিংসা অনেক সময় মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিকভাবে ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। মানুষের মনের ওপর এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, কারণ প্রতিহিংসার অনুভূতি জিইয়ে রাখলে মানসিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষোভ, হতাশা এবং ক্রোধের সংমিশ্রণে তৈরি হওয়া এই অনুভূতিটি স্বাভাবিক সম্পর্ক এবং সামাজিক সম্প্রীতির মধ্যে ফাটল তৈরি করতে পারে।
প্রতিহিংসা শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না; অনেক ক্ষেত্রে এটি পারিবারিক, সামাজিক, এমনকি রাজনৈতিক পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, সামাজিক ব্যবস্থায় কোনো একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি অন্যায় হলে, ওই গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় তার প্রতিশোধ নিতে চায়। ফলস্বরূপ, সামাজিক সহিংসতা বৃদ্ধি পায়, এবং সমাজের স্থিতিশীলতা বিপন্ন হয়।
বহু ধর্মগ্রন্থ ও নৈতিক শিক্ষায় প্রতিহিংসা বর্জনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, হিন্দু ধর্মে প্রতিহিংসা ও ক্রোধকে জীবনের বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে অহিংসা এবং ক্ষমার আদর্শকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ইসলাম ধর্মে প্রতিহিংসা নয় বরং ক্ষমা ও সহনশীলতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। খ্রিস্টধর্মেও বলা হয়েছে, "প্রতিশোধ আমার, আমি প্রতিকার করব।" এর মাধ্যমে প্রতিহিংসার পথ বর্জন করে ধৈর্য ও ক্ষমার শিক্ষাই প্রচারিত হয়েছে।
সমাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিহিংসা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ক্ষমা এবং সহানুভূতির চর্চা করতে হবে। ক্ষমাশীল মনোভাব গড়ে তুললে প্রতিহিংসার প্রবণতা হ্রাস পায় এবং মানুষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাস করতে পারে।
আরও পড়ুন >>> জেলাস অর্থ কি