প্রয়োজন অর্থ

প্রয়োজন অর্থ : "প্রয়োজন" শব্দটি বাংলা ভাষায় বহুমাত্রিক অর্থ বহন করে। এটি সাধারণত মানুষের জীবনে অপরিহার্য, অপরিবর্তনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। প্রয়োজন বলতে এমন কিছু বোঝায় যা মানুষকে তার লক্ষ্য, সুখ, স্বাস্থ্য বা সুরক্ষার জন্য অবশ্যই পূরণ করতে হয়। এটি ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শারীরিক বা মানসিক যেকোনো দিক থেকেই হতে পারে। 

প্রয়োজনের সংজ্ঞা নির্ভর করে বিভিন্ন পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের উপর। এক ব্যক্তির কাছে যা প্রয়োজনীয়, অন্য কারও জন্য তা হয়তো অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিশুর জন্য তার মায়ের সান্নিধ্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হতে পারে, কিন্তু একজন বৃদ্ধের জন্য একা থাকাও তার মানসিক শান্তির জন্য প্রয়োজন হতে পারে। 

মানুষের জীবনে প্রয়োজনগুলিকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায় - মৌলিক প্রয়োজন এবং অতিরিক্ত প্রয়োজন। মৌলিক প্রয়োজনগুলি হলো বেঁচে থাকার জন্য জরুরি যা ছাড়া জীবন সম্ভব নয়। যেমন খাদ্য, পানি, বাসস্থান, পোশাক ইত্যাদি। আবার শিক্ষার প্রয়োজনও বর্তমান সময়ে মৌলিক প্রয়োজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ শিক্ষা ব্যতীত ব্যক্তি তার ক্ষমতা এবং পেশাগত জীবনে উন্নতি সাধন করতে পারবে না।

অপরদিকে, অতিরিক্ত প্রয়োজনগুলিকে বিলাসিতা বলা যেতে পারে। যেমন - মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, গাড়ি, সজ্জিত বাসস্থান ইত্যাদি। এগুলো মানুষের জীবনের মান বাড়াতে সাহায্য করে, তবে এগুলোর অনুপস্থিতিতে জীবন অচল হয়ে যাবে না। 

প্রয়োজনের গুরুত্ব বুঝতে গেলে জীবনবৃত্তে প্রয়োজনের বিভিন্ন স্তরের বিশ্লেষণ করতে হবে। এই স্তরগুলোর মধ্যে কিছু প্রয়োজন অত্যাবশ্যকীয়, কিছু আবার ব্যক্তিগত বা সামাজিক স্তরের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, মানুষের শারীরিক প্রয়োজন যেমন খাদ্য এবং বাসস্থান পূরণ না হলে তার শারীরিক জীবন বিপন্ন হবে। আবার মানসিক প্রয়োজন, যেমন ভালোবাসা, নিরাপত্তা এবং স্বীকৃতির অভাব থাকলে সে মানসিকভাবে দুর্বল বোধ করবে।

মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক প্রয়োজনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থ উপার্জন ছাড়া বর্তমান সমাজে জীবন যাপন করা অত্যন্ত কঠিন। অর্থ ছাড়া মানুষ মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণ করতে পারবে না এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবে। তাই প্রয়োজনের সঙ্গে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা জড়িত।  

তবে প্রয়োজন সবসময় ব্যক্তি বা সমাজের স্বার্থে হওয়া উচিত, তা না হলে তা ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে। যেকোনো ব্যক্তিগত প্রয়োজনের পিছনে সামাজিক ও পরিবেশগত সচেতনতা থাকা প্রয়োজন, যাতে তা সমাজ ও পরিবেশের ক্ষতি না করে। 

   আরও পড়ুন >>> সহযোগিতা অর্থ 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url