আউটসোর্সিং কাকে বলে

আউটসোর্সিং কাকে বলে : আউটসোর্সিং একটি ব্যবসায়িক কৌশল, যেখানে কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের নির্দিষ্ট কাজ বা সেবা অন্য একটি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি দ্বারা সম্পন্ন করায়। সহজ কথায়, আউটসোর্সিং হলো একটি প্রক্রিয়া যেখানে একটি কোম্পানি তাদের কাজ নিজে না করে তা বাইরের বিশেষজ্ঞ বা অন্য প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়। এটি সাধারণত ব্যয় সাশ্রয়, দক্ষতা বৃদ্ধি, এবং নির্দিষ্ট কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য করা হয়।

          আউটসোর্সিং কাকে বলে

আউটসোর্সিং কাকে বলে

আউটসোর্সিং-এর ধারণা ও উৎপত্তি

আউটসোর্সিং শব্দটি ইংরেজি "Out" এবং "Sourcing" শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো কাজের উৎসকে বাইরে নিয়ে যাওয়া। আউটসোর্সিংয়ের ধারণা প্রথম দিকের শিল্প বিপ্লবের সময় থেকে আসতে শুরু করলেও আধুনিক যুগে এটি বিশেষ গুরুত্ব পায়। ১৯৮০-এর দশক থেকে গ্লোবালাইজেশনের প্রভাব এবং তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

বিশ্বের বিভিন্ন বড় কোম্পানি, যেমন: অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, গুগল ইত্যাদি, বিভিন্ন ধরনের কাজ আউটসোর্স করে থাকে। কাজগুলো সাধারণত এমন দেশে পাঠানো হয় যেখানে মজুরি কম, দক্ষ জনবল বেশি, এবং কাজের গুণগত মান ভালো হয়।


আউটসোর্সিং-এর প্রকারভেদ

আউটসোর্সিং বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। এর কয়েকটি প্রধান ধরনের ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া হলো:

১. বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (BPO)

এটি সবচেয়ে প্রচলিত আউটসোর্সিং প্রক্রিয়া। সাধারণত গ্রাহক সেবা, ডেটা এন্ট্রি, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা, অ্যাকাউন্টিং ইত্যাদি কাজ এই ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে।

২. আইটি আউটসোর্সিং (ITO)

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কাজ, যেমন: সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডিজাইনিং, ডাটা ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি আইটি আউটসোর্সিংয়ের আওতায় পড়ে।

৩. নলেজ প্রসেস আউটসোর্সিং (KPO)

এটি অপেক্ষাকৃত জটিল এবং গবেষণামূলক কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। গবেষণা ও বিশ্লেষণ, আইন সংক্রান্ত কাজ, এবং প্রযুক্তিগত লেখালেখি এর উদাহরণ হতে পারে।

৪. ম্যানুফ্যাকচারিং আউটসোর্সিং

কোনো পণ্য তৈরির কাজ অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে দেওয়াকে বোঝায়। অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড তাদের উৎপাদনের কাজ কম খরচের জন্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আউটসোর্স করে।


আউটসোর্সিং কেন করা হয়?

আউটসোর্সিং করার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। নিচে এর কয়েকটি প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো:

১. ব্যয় সাশ্রয়

উন্নত দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শ্রম খরচ তুলনামূলকভাবে কম। ফলে কাজ আউটসোর্স করার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো উৎপাদন খরচ কমাতে পারে।

২. দক্ষতা বৃদ্ধি

আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিশেষায়িত পেশাদারদের সহায়তা নেওয়া সম্ভব হয়। এতে কাজের মান বৃদ্ধি পায় এবং সময় বাঁচে।

৩. মৌলিক কাজে মনোযোগ

প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মূল ব্যবসায়িক কার্যক্রমে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার জন্য কিছু সেকেন্ডারি কাজ আউটসোর্স করে।

৪. সময়মতো কাজ সম্পন্ন করা

আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে দক্ষ জনবলের সহায়তায় কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা যায়।


আউটসোর্সিংয়ের সুবিধা

আউটসোর্সিং-এর প্রধান সুবিধাগুলো হলো:

  1. লাভজনক ব্যবসায়িক কৌশল: কম খরচে মানসম্মত কাজ পাওয়া যায়।
  2. উন্নত দক্ষতা: প্রফেশনালদের সহায়তায় উচ্চমানের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।
  3. সময় সাশ্রয়: আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে একই সময়ে একাধিক কাজ করা সম্ভব হয়।
  4. ঝুঁকি হ্রাস: বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়ে কাজ করার ফলে ঝুঁকি কমে।

আউটসোর্সিংয়ের চ্যালেঞ্জ
আউটসোর্সিংয়ের চ্যালেঞ্জ

যদিও আউটসোর্সিং অনেক সুবিধা প্রদান করে, তবে এর কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে:

১. গোপনীয়তা ঝুঁকি

আউটসোর্সিংয়ের সময় প্রতিষ্ঠানের গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

২. মান নিয়ন্ত্রণ

কখনো কখনো আউটসোর্সিং কোম্পানি প্রত্যাশিত মানের কাজ দিতে ব্যর্থ হয়।

৩. সাংস্কৃতিক পার্থক্য

বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও ভাষাগত পার্থক্যের কারণে কাজের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে।

৪. নিয়ন্ত্রণের অভাব

বাইরের সংস্থা বা ব্যক্তিদের হাতে কাজ দিলে তার উপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়।


আউটসোর্সিংয়ের উদাহরণ
আউটসোর্সিংয়ের উদাহরণ

১. ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস

আজকের দিনে আউটসোর্সিংয়ের জন্য অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যেমন:

  • Upwork
  • Fiverr
  • Freelancer
    এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিভিন্ন দেশের পেশাদাররা কাজ করে।

২. বিপিও সেক্টর

ভারত, ফিলিপাইন, এবং বাংলাদেশ আউটসোর্সিং সেবা প্রদানকারী দেশের মধ্যে অগ্রগামী।

৩. টেক কোম্পানির সেবা

বড় বড় কোম্পানি, যেমন: অ্যাপল তাদের হার্ডওয়্যার উৎপাদনের কাজ চীন এবং অন্য দেশে আউটসোর্স করে থাকে।


বাংলাদেশে আউটসোর্সিং

বাংলাদেশে আউটসোর্সিং খাত দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আইটি সেবা এবং ফ্রিল্যান্সিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিং আয়ের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি।

বাংলাদেশের আউটসোর্সিং খাতের কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো:

  • কম খরচে দক্ষ জনবল পাওয়া যায়।
  • ইন্টারনেটের প্রসার এবং সরকারের উদ্যোগ।
  • তরুণদের মধ্যে প্রযুক্তিগত দক্ষতার উন্নয়ন।

উপসংহার

আউটসোর্সিং বর্তমানে একটি বৈশ্বিক কৌশল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এটি কোম্পানিগুলোর ব্যয় কমানোর পাশাপাশি কাজের মান বৃদ্ধি করে। তবে এর সাথে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও, সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশলের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ের সুবিধাগুলো অর্জন করা সম্ভব। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি একটি বড় সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।

আউটসোর্সিং ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক জগতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হয়। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং গ্লোবাল কানেক্টিভিটির কারণে এর চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, যা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে।

        আরও পড়ুন >>> ফ্রিল্যান্সার কাকে বলে

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url