মাহে রমজান অর্থ কি
মাহে রমজান অর্থ কি :
মাহে রমজান অর্থ ও তাৎপর্য
মাহে রমজান শব্দটি দুটি আরবি শব্দ থেকে এসেছে— "মাহ" অর্থ মাস এবং "রমজান" অর্থ দাহন, জ্বালানো বা পোড়ানো। অর্থাৎ মাহে রমজান বলতে বোঝায় সেই মাস, যখন মুমিনদের গুনাহ পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং তারা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ পায়।
রমজান মাসের গুরুত্ব
রমজান মাস হলো ইসলাম ধর্মের নবম মাস এবং এটি অত্যন্ত পবিত্র ও বরকতময় সময়। এই মাসে মুসলমানরা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও কু-আচরণ থেকে বিরত থাকে। এটি আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম।
কুরআন ও হাদিসে মাহে রমজানের গুরুত্ব:
১. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:
"রমজান হল সেই মাস, যাতে মানুষের জন্য হিদায়াত, সত্যপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন এবং হক-বাতিলের পার্থক্যকারী কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।" (সুরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
২. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।" (বুখারি, মুসলিম)
রমজান মাসের বৈশিষ্ট্য
রমজান মাসে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্য কোনো মাসে পাওয়া যায় না—
১. কুরআন নাজিলের মাস
এই মাসেই মানবজাতির জন্য শ্রেষ্ঠ দিকনির্দেশনা পবিত্র কুরআন নাজিল করা হয়েছে।
২. রোজা পালন
রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে, যা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। এটি মুসলমানদের আত্মসংযম ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যম।
৩. লাইলাতুল কদর
রমজানের শেষ দশকে রয়েছে লাইলাতুল কদর, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এই রাতে ইবাদত করলে হাজার মাস ইবাদত করার সওয়াব পাওয়া যায়।
৪. রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস
রাসুল (সা.) বলেছেন,
“রমজান মাসের প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের এবং শেষ দশক জাহান্নাম থেকে নাজাতের।” (মিশকাত)
৫. তারাবিহ নামাজ
রমজান মাসে বিশেষ ইবাদত তারাবিহ নামাজ পড়া হয়, যা কুরআন তেলাওয়াত শোনার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
৬. ইফতার ও সাহরি
রমজানের অন্যতম বিশেষ আমল হলো সাহরি খাওয়া ও ইফতার করা, যা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত।
রমজান মাসের শিক্ষা
রমজান মাস থেকে মুসলমানরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে—
১. আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জন
২. ধৈর্য ও সংযমের শিক্ষা
3. গরিব-দুঃখীদের সহানুভূতি
4. দানের মানসিকতা সৃষ্টি
5. একতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি
উপসংহার
মাহে রমজান কেবল একটি মাস নয়, এটি একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যেখানে মানুষ আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য ও আল্লাহর আনুগত্য শেখে। এই মাসের বরকতপূর্ণ সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে আমল বৃদ্ধি করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের পূর্ণ ফজিলত অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
আরও পড়ুন >>> সিয়াম নামের অর্থ কি